October 22, 2024, 5:40 am

তবুও ভোটের অংকে বিএনপি

॥ নূরুল হাসান সাক্ষর ॥ বইছে নির্বাচনী হাওয়া। সামনে বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন। মাঠের প্রধান বিরোধী দল বিএনপির নির্বাচন বর্জনের সাথে সরকারী দলের মনোয়ন নিয়েই নির্বাচনের জ্বল অনেক ঘোলা হয়েছে, তার সাথে চমক বিএনপির সুরে সুর মিলিয়ে বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ)’র নির্বাচন বর্জনের ঘোষনা এমনকি ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী ঘোষণাতেও ছিলো চমক। সব মিলিয়ে এক রকম পাচমিশালি পরিবেশে নির্বাচন হতে যাচ্ছে বরিশালে। অনেকেই এখন হিসাব কষছেন নির্বাচনের। জাতীয় নির্বাচন কিংবা স্থানীয় সরকার নির্বাচনে বরিশালে বিএনপির এক ধরনের চাপা ভোট রয়েছে এ কথা অনেকেই অকপটে স্বীকার করেন। জাতীয় নির্বাচনে ১৯৭৩ সালের পরে ২০১৪ সালে শওকত হোসেন হিরন বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার আগে আর কোন নিরপেক্ষ নির্বাচনের ভোট গ্রহণে বরিশাল-৫ আসনটি আওয়ামী লীগের ভাগ্যে জোটে নি। এর আগে সর্বশেষ ১৯৭৩-এর ৭ মার্চের জাতীয় নির্বাচনে এ আসনে নুরুল ইসলাম মঞ্জুর আওয়ামী লীগ প্রার্থী হিসেবে নৌকা নিয়ে বিজয়ী হবার পরে ২০১৪ (বিনাপ্রতিদ্বন্দীতায়) সালের আগ পর্যন্ত এখানে বিজয়ের হাসি হেসে পাল তুলতে পারেনি নৌকা। প্রায় ৪০ বছর এই শহরে নৌকা পাল তুলে চলতে পারেনি। বিভিন্ন সময় অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনগুলোতে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা প্রায় ৪০ থেকে ৫০ হাজার ভোটের ব্যবধানে হেরেছেন বিএনপির কাছে। শুধু গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী নৌকার প্রার্থীর কাছে বড় ব্যবধানে হেরেছিলেন। এমনকি ২০০৮ সালের নির্বাচনেও বিএনপির এক রকম ভংগুর অবস্থার মাঝে এই আসনে ধানের শীষ জিতেছিলো। আর বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের চিত্রটাও সরকারী দলের জন্য অতোটা সুখকর নয়। ২০০২ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর এ পর্যন্ত বরিশাল সিটি করপোরেশনের নির্বাচন হয়েছে মোট চারবার। শুধুমাত্র গত নির্বাচন বাদে আগের সবগুলো নির্বাচনেই বিএনপির সেই চাপা ভোটগুলো চমক দেখিয়েছে , এমনকি এর আগের ২০১৪ সালে বিএনপি অপেক্ষাকৃত কম জনপ্রিয় প্রার্থী মনোয়ন দিয়েও আওয়ামীলীগের তুমুল জনপ্রিয় প্রার্থী শওকত হোসেন হিরনকে পরাজিত করতে সক্ষম হয়। প্রথমবার ২০০৩-এর নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহী হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন বিএনপির দুই প্রভাবশালী নেতা সাবেক মেয়র আহসান হাবিব কামাল এবং এবায়েদুল হক চান। সেই নির্বাচনে তারা দুজন মিলে পান ৩৭ হাজার ভোট। দলীয় প্রার্থী সাবেক মেয়র মজিবর রহমান সরোয়ারের প্রাপ্ত ভোট ছিল ৪১ হাজার। বিএনপির এ তিন নেতার সম্মিলিত ভোট ছিল যেখানে ৭৮ হাজার, সেখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী অ্যাডভোকেট এনায়েত পীর খান ৩৭ হাজার ভোট পেয়ে পরাজিত হন সরোয়ারের কাছে। ব্যবধান ছিলো দ্বিগুণের চেয়েও বেশী। এমনকি সেনা সমর্থিত সরকারের সময়ের বিসিসি নির্বাচনে অনেক প্রতিকূল অবস্থার মাঝে অংশ নিয়েও সম্মিলিতভাবে বিএনপি এগিয়ে ছিলো। ২০০৮ সালের সেই নির্বাচনে বিএনপি নেতা সরফুদ্দিন সান্টুকে মাত্র ৫৮৮ ভোটে হারিয়ে মেয়র হন আওয়ামী লীগের প্রয়াত শওকত হোসেন হিরন। ব্যতিক্রম শুধু গত বিসিসি নির্বাচন, ২০১৮ সালের সেই নির্বাচনে বিএনপির প্রভাবশালী প্রার্থী নৌকার প্রার্থীর কাছে জামানত হারিয়েছিলেন। এবার নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী লাঙ্গল এবং হাতপাখা, এখন দেখার বিষয় বরিশালে বিএনপির রহস্যময় চাপা ভোটগুলো কাকে সুবিধা এনে দেয়। এটা নি:সন্দেহে বলা যায়, বিএনপির ভোটের উপরই নির্ভর করবে নৌকার পাল তোলা, লাঙ্গলের মাটি কাটা কিংবা হাতপাখার হিমেল হাওয়া। সে জন্য অবশ্য অপেক্ষা করতে হবে ১২ জুন পর্যন্ত, ততোদিনে নিশ্চিতভাবে ঘোলা পানি আরো ঘোলা হবে।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত © All rights reserved © 2024 DailyBiplobiBangladesh.com
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com